শিরোনাম

তামাক চাষের আখড়ায় পরিনত হয়েছে দীঘিনালায়


জীতেন বড়–য়া,খাগড়াছড়িঃ তামাক চাষের আখড়ায় পরিণত হয়েছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা। এই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ফসলি জমি, মাইনী নদীর তীরের উর্বর খেত, বাড়ির আঙিনা; এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে ফেলেছে ক্ষতিকর তামাক চাষ।

একদিকে কৃষি বিভাগ তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার দাবী করলেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। এতে করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার কৃষি ব্যবস্থা ধংসের আশংকা দেখা দিয়েছে।

ছবি/বাংলাদেশের পত্রিকা

যে জমিতে আগে চাষাবাদ হতো শাক-সবজি, আলু, ধান, ভূট্টাসহ নানা ফসলের। সে উর্বর জমি এখন তামাক চাষের দখলে।

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার মাইনীর অববাহিকার অধিকাংশ উর্বর জমিই এখন তামাক কম্পানীগুলোর আগ্রাসনের শিকার।

নিউৎসাহিত করতে কোন ধরনের উদ্যোগ না থাকায় দেশি-বিদেশি কোম্পানীগুলো তামাক চাষে চাষিদের উদ্ধুদ্ধ করেই দিন-দিন বাড়ছে তামাকের চাষ।

ছবি/বাংলাদেশের পত্রিকা

এতে মাইনী নদীর দু’তীরবর্তী ফসলী জমির প্রায় পুরোটাই এখন তামাকের দখলে।আর এ সব কারণে চাষীরা তামাক চাষে বেশী করে ঝুকছে ।

সরোজমিনে দেখা গেছে দীঘিনালা উপজেলার চারিদিকে তামাক আর তামাক। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশেও তামাকের দখলে।

বিশেষ করে মাইনী নদীর তীরবর্তী উর্বর ফসলি জমিতে প্রতি বছরের মতো এবারও শাক-সবজির বদলে চাষবাদ করা হয়েছে ক্ষতিকর তামাক।

ছবি/বাংলাদেশের পত্রিকা

শুধুই তাই নয়, দীঘিনালা হাসিনসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দীঘিনালা কুজেন্দ্র-মল্লিকা কলেজের পাশেও তামাক চাষ করা হয়েছে।এতে কওে স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা ।

অথচ এক সময় এসব জমিতে আলু, কফি, টমেটোসহ বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল ।
কৃষি সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, প্রতি বছর বন্যার কারণে মাঈনী নদীর দু’তীরবর্তী ফসলী জমিতে পলি জমে।

তাই, এসব জমিতে ফসল উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। আর এ কারণেই তামাক কোম্পানি এ অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে শুধুমাত্র খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলায় এ বছর ৪৭১ হেক্টও জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে ।

এবছর ৪/৫ শত জন চাষী প্রায় ১হাজার ২০০ একর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। তামাক শুকাতে পুরো উপজেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ৫শতাধিক চুল্লী।চুল্লীগুলাতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় বিশাল পরিমান কাঠ।

স্থাণীয় কৃষক রবি শংকর চাকমা,সোনা রতন চাকমা ও আব্দুল আলীম বলেন তামাক চাষে কৃষকদের অগ্রীম লোনের পাশাপাশি সার বীজ কীটনাশক এবং উপাদন করার পর তামাক কোম্পানীরা তা আবার কিনে নেয়। তাই আমরা তামাক পাতা সহজে বিক্রি করতে পারি। অপরদিকে অন্যান্য কৃষি ফসল যেমন, ভূটা, আখ, সূর্যমূখী ফুল, আলুসহ অন্যান শাক সবজি চাষাবাদ করলে বিক্রয়ের নিশ্চয়তা না থাকায় ফসলের উৎপাদন করেও ন্যায্য দাম মিলেনা।

ছবি/বাংলাদেশের পত্রিকা

অন্যদিকে তামাক কোম্পানীগুলো সার ও অগ্রিম অর্থ দেয়ায় কৃষকরা তামাক চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন বলে তারা জানান।

কুজেন্দ্র মল্লিকা মর্ডান কলেজের অধ্যক্ষ, সাধন ত্রিপুরা ও হাসিনসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
আকলিমা খাতুন জানান দীঘিনালা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ফসলি জমি, স্কুল, কলেজ মাইনী নদীর তীর এমন কি বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষতিকর তামাক চাষ।

মাঈনী নদীর দু’তীরবর্তী ফসলী জমিতে পলি জমায় এসব জমিতে ফসল উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। আর এ কারণেই তামাক কোম্পানি এ অঞ্চলকে তামাক চাষের জন্য বেছে নিয়েছে।

হাসিনসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা আক্তার আরো জানান,আমরা মা সমাবেশের মাধ্যমে তামাকের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে অভিবাভকদের তুলে ধরি এবং তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি, তার পরও যাদের জমি তারা তামাক চাষ অব্যাহত রাখছে ।

একই ভাবে কুজেন্দ্র মল্লিকা মর্ডান কলেজের অধ্যক্ষ সাধন ত্রিপুরা জানান, কলেজের পক্ষ থেকে একাধিক বার নিষেধ করার পরও যাদের জমি তারা কলেজের পাশেই তামাক চাষ করছে।

অপরদিকে সচেতন মহলের দাবী তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করনে সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থার কার্যক্রমও দেখা চোখে পড়েনি। সেকারণে তামাকের বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের সাড়া পড়ছেনা।

দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার তনয় তালুকদার বলেন, তামাক চাষ স্বাস্থ্যরজন্য অব্যশই ক্ষতিকর। তামাক চাষীদের দীর্ঘ মেয়াদি রোগ দেখা দিতে পারে ।

যার ফলে তামাক চাষীদের শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, হজম শক্তি কমে যায় এছাড়া নানা ধরনের রোগ হতে পারে। এসকল রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য তামাক চাষ ছেড়ে দিতে হবে এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সর্ম্পেকে সকলে সচেতন করতে হবে।

এদিকে কৃষি বিভাগ তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার কথা বললেও মাঠে তার কোন প্রভাব নেই। উল্টো গেলো বছরের তুলনায় এ বছর তামাক চাষের পরিধি আরো বেড়েছে।

বিগত সময়ের চেয়ে এবার তামাক চাষ বেড়েছে বলছেন দীঘিনালার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শাহাদাত হোসেন এই।

তিনি জানান কৃষিপণ্যের সঠিক দাম না পাওয়া এবং তামাক কোম্পানীগুলোর প্রতিযোগীতামূলক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করায় কৃষকরা তামাক চাষে ঝুকছেন।

তিনি আরো বলেন, তামাকের বিকল্প হিসেবে যে ফলস আমরা বিগত বছরগুলোতে কৃষকদের দিয়ে চাষ করানোর চেষ্টা করেছি, দেখা গেছে সঠিক বিপনন ব্যবস্তা না থাকার কারনে সে সব ফসলের সঠিক দাম তারা পায়নি ।এতে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ছবি/বাংলাদেশের পত্রিকা

এ ছাড়া দীঘিনালা উপজেলায় তামাক চাষে আরেকটা নতুন কোম্পানি কাজ করছে। এসব কারনে তামাক কোম্পানিগুলোতে প্রতিযোগিতার বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমরা চেষ্টা করছি উচ্চমূল্যের ফসল যেমন মসলা জাতীয় ফসল, ভুট্টা, সূর্যমুখী, সরিষা চাষাবাদে উৎসাহিত করে তামাক চাষে নিরোৎসাহিত করা করা হচ্ছে।

অপরদিকে পার্বত্য এ জনপদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আইন করে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রন করা দরকার বলে মনে করেন এখানকার পরিবেশ সচেতন মহল।


0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments