নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নতুন রাজনৈতিক নিবন্ধনের ব্যাপারে আজগবী খবর প্রচারিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের স্বচ্চতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। দেশের বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষনার আগেই তা পত্রিকায় প্রকাশ করায় এই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রকাশিত ৫টি দলের গোপন আতাত থাকার বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেছেন।
এমনকি দৈনিক পত্রিকায় আগে থেকে খবর পেয়ে যাওয়া মানেই নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রাজনৈতিক দলগুলোর সহিত নির্বাচন কমিশনের যোগাযোগ থাকার পূর্বাভাস বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোর নেতাকর্মীরা।
গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা হবে সেটা আগে থেকেই সবারই জানা ছিল।
উপরিউক্ত বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে ছিল দেশ বিদেশের গণ মাধ্যমগুলোর সাংবাদিকরা। তবে যতটুকু জানা যায়, এই বৈঠকের ব্যাপারে কোন সাংবাদিকদেরকে কোন প্রকার তথ্য দেয়া হয়নি। যেখানে দেশের প্রথমসারির কোন গণমাধ্যম ৫ দল নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়ে খবর প্রচার করেনি সেখানে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা খবর প্রচার যে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত তা বলা চলে।
দেশের শীর্ষসারির গণমাধ্যম ফলোআপ নিউজ হিসেবে একটি নিউজ করা হয়। যাতে জানানো হয়েছে; নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলতি মাসের মধ্যে শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু ৫টি দলকে নিবন্ধিত করার বিষয়ে কোন প্রকার তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
অথচ দৈনিক ডেসটিনি, দৈনিক খবরের কাগজ, দৈনিক রূপালী বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় “এনসিপি সহ ৫টি রাজনৈতিক দল পাচ্ছে ইসির নিবন্ধন” শিরোনামে ৫ দলের নাম উল্লেখ করে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
উক্ত নিউজ দেখে হতবাক দেশবাসী ও অস্বস্তিতে রয়েছে নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের নেতাকর্মীরা। তবে উক্ত খবরটি হুবুহু নকল ছিল, শুধু খবরের শিরোনাম নামই নয় খবরের ভিতরের দাড়ি, কমাও ছিল একই। ইসিতে আবেদন করা একটি দলের নেতা মনে করেন, এই খবরটি ইসির অগোচরে যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে।
তিনি মনে করেন, এই নিউজটি প্রথমে আমজনতার দলের মূখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায় দৃষ্টিগোচর হলে, পরে একই ধরনের নিউজ বাকি কয়েকটি পত্রিকায় করা হয়। এই তাদের অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের ল্যান্ড ফোনে কল দিয়ে ‘উপরিউক্ত নিউজের ব্যাপারে নিউজ রুম থেকেও কোন প্রকার সদুত্তোর দিতে পারেনি।
এই খবরের ব্যাপারে এবার নিবন্ধন প্রত্যাশীদলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, এসব রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে আমাদের দল কোন অংশেই কম নয়। আমাদের বাদ দিয়ে তাদের যদি নিবন্ধন দিয়ে থাকে, এবং সেই তথ্য যদি অগ্রিম প্রকাশ হয়, তাহলে তাদের মধ্যে আতাত করা হয়েছে, সেটা আগে থেকে বুঝা যায়। এতে করে আমরা যেমন হতাশ হয়েছি তেমনি তলে তলে নিবন্ধন হাইজ্যাক হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তো রয়েছেই।
বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশন যদিও এখন বিদেশ সফরে রয়েছেন, তিনি আসলে এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন এটাই প্রত্যাশা করি।
উল্লেখ্য, এবার ইসিতে মোট ১৪৩টি রাজনৈতিক দল আবেদন জমা দেয়। প্রাথমিক বাছাই শেষে ১২১টি দলের আবেদন বাতিল করা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২টি দলকে মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর সর্বশেষ ১৬ দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), আম জনতার দল, ফরোয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি ও নতুন বাংলাদেশ পার্টি অন্যতম। এ ছাড়া আবেদন বাতিল হওয়া দলগুলোকে ইসি আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে।
এছাড়াও নতুন ২২টি রাজনৈতিক দলের মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠানো কাগজপত্র ইতিমধ্যে সচিবালয়ে পৌঁছেছে। প্রাপ্ত তথ্যগুলো একটি ব্রডশিট আকারে একত্র করে কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।
এরপর কমিশনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রতীক বরাদ্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রতীকসংক্রান্ত বিধিমালার সংশোধনের প্রস্তাব এখনো আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। যাতে নির্বাচনী রোডম্যাপ কার্যক্রমে কোনো বিলম্ব না হয়।