আদালত কে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা ড. মকবুল খান

নিজস্ব প্রতিবেদক:বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (ইইউবি)-এর বিতর্কিত সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ড. মকবুল আহমেদ খান-এর বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অভিযোগ উঠেছে। নারী কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে জর্জরিত হয়ে গত ২৬ অক্টোবর ২০২৪ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তিনি।

সম্প্রতি ড. মকবুল আহমেদ খান অভিযোগ করেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড অবৈধভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে এবং নতুন ট্রাস্টি বোর্ড অবৈধ উপায়ে উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ দিয়েছে। তবে অভিযোগে তিনি সরাসরি তার ছেলে আহমেদ ফরহাদ খান-এর নাম উল্লেখ না করলেও, ফরহাদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, তার বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ জালিয়াতি, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে বাবা ও ছেলের মধ্যে তৈরি হওয়া বিরোধে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্ষতি না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (NSI) তদন্তের মাধ্যমে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (RJSC)” কর্তৃক অনুমোদন পাওয়ার পড়েও বাবা কীভাবে অবৈধ উপায় অবলম্বন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে? বিশ্ববিদ্যালয় বিশৃঙ্খলা সহ সকল অভিযোগের বিষয় খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। আমাদের লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।

ভিসি নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিসি নিয়োগে একটি প্যানেল হবে, যেটি ট্রাস্টি বোর্ড থেকে অনুমোদিত হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে সেখান থেকে আমাদের চিঠি দেবে। উপাচার্য প্যানেল বৈধ ট্রাস্টি বোর্ড অনুমোদন করেছে কিনা, এগুলো সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চেয়ে পাঠিয়েছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার জুবায়ের এনামুল করিম বলেন, আগের ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ায়, বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৩১ ধারা অনুযায়ী সকল নিয়ম মেনে অধ্যাপক ড. গোলাম মোর্তজা কে ভিসি হিসেবে সুপারিশ করা হয় বোর্ড অফ ট্রাস্টিস এর সাধারণ সভায়। এবং পরবর্তীতে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ইউজিসির সহায়তা চেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান বলেন, আমার বাবা নিজেই পদত্যাগ করেন এবং (বিওটি) সিদ্ধান্তে আমাকে চেয়ারম্যান বানানো হয়। এখন আমার বাবা কিভাবে এটা অবৈধ বলে দাবী করতে পারে? আমার বাবা একটি কুচক্রী মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। তাকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং তিনি অবৈধ উপায়ে ইউনিভার্সিটি দখলের চেষ্টায় ষড়যন্ত্র করছে বলে যানান ছেলে।

তিনি আরোও বলেন, ২০২৫ সালের ২৫ জুন ইইউবি’র উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলিম দাদের মেয়াদ শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা যেন ব্যাহত না হয় সেজন্য ১৬ জুলাই একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ড. গোলাম মরতুজাকে ভারপ্রাপ্ত ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মরতুজা বলেন, বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি নিয়োগের বিধান অনুযায়ী আমি ভারপ্রাপ্ত ভিসি হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছি। এবং তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অবসরপ্রাপ্ত মেজর আমিনুল রহমান বলেন, বৈধ নিয়োগ কে অবৈধ বলে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. মকবুল আহমেদ খান। আইনের বিধান অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সুপারিশে আচার্য বা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে জন্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মরতুজা কে সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আরও বলেন, ড. মকবুল আহমেদ খান এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, যা ২০২২ সালের ইউজিসি (UGC)-এর তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, ড. মকবুল আহমেদ খান তাঁর স্বেচ্ছায় দাখিলকৃত পদত্যাগকে ‘বেআইনি দাবি করে একটি টাইটেল স্যুট দায়ের করেন, যেখানে তিনি বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টি-কে অবৈধ ঘোষণা চেয়ে এবং তাদের কার্যক্রমে বাধা প্রদানের লক্ষ্যে (নিষেধাজ্ঞা) Injunction প্রার্থনা করেন। উক্ত নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন (Injunction Application) প্রথমে বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজকর্তৃক খারিজ হয়। পরবর্তীতে, তিনি বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতে মিছ আপিল দায়ের করলে সেখানেও মিছ আপিলটি বিজ্ঞ জেলা জজকর্তৃক খারিজ হয়ে যায়। বিজ্ঞ জেলা জজ উক্ত মিছ আপিলটি খারিজ মর্মে নিম্নোক্ত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন।

যেহেতু, ২৬.১০.২০২৪ ইং তারিখে সাধারণ সভার মাধ্যমে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং ২৯.০১.২০২৫ ইং তারিখে আরজেএসসি (RJSC) কর্তৃক নতুন ট্রাস্টি বোর্ড অনুমোদন সম্পন্ন হয়েছে, এবং ড. মকবুল আহমেদ খান পূর্বেই পদত্যাগ করেছেন, তাই উক্ত নিষেধাজ্ঞা-এর আবেদন অকার্যকর।

সর্বশেষ মামলার বিবাদী পক্ষের উকিল বলেন, ড. মকবুল আহমেদ খান বিজ্ঞ জেলা জজ আদালত কর্তৃক তার মিছ আপিলটি খারিজ হয়ে যাওয়ায় উক্ত আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নিকট একটি সিভিল রিভিশন দায়ের করেন। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত মামলায় ড. মকবুল আহমেদ খান কে কোনো অনুকূল আদেশ দেননি বরং একটি স্থিতাবস্থা-এর আদেশ (Status Quo Order) প্রদান করেন। পরবর্তীতে, মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ-এর মাননীয় চেম্বার জজ উক্ত স্থিতাবস্থা-এর আদেশ (Status Quo Order) স্থগিত (Stay) করেন। সর্বশেষ, ড. মকবুল আহমেদ খান মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ-এর মাননীয় চেম্বার জজ কর্তৃক প্রদত্ত স্থগিতাদেশ (Sta

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments