শিরোনাম

খাম ছাড়া চিঠি দেওয়ায় মহিলা কর্মকর্তাকে ধমকালেন জামায়াত কর্মী


ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ আগামী ৮ই মার্চ নারী দিবস উপলক্ষে চিঠি দেওয়াকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ধমকিয়েছেন জামায়াতের এক কর্মী।

সালথা উপজেলা জামায়াতের আমির ও সাধারণ সম্পাদককে খাম ছাড়া চিঠি দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইলে ফোন দিয়ে ধমকের সুরে নানা ধরনের কথা বলেন ওই জামায়াত কর্মী।

বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ ২০২৫) দুপুর সাড়ে ৩ টার দিকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলির ব্যবহৃত মোবাইল নম্বারে ফোন দিয়ে এমন কান্ড ঘটান ওয়ালি উজ জামান নামে এক ব্যক্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ব্যক্তি সালথা উপজেলা জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। এছাড়া তিনি সালথা বাজারের ব্যবসায়ী ও স্কয়ার প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলি বলেন, নারী দিবস উপলক্ষে আমি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের চিঠি পাঠিয়েছি। জামায়াতের নেতাদের চিঠিটি ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী নিতাইয়ের মাধ্যমে জামান সাহেবের দোকানে পাঠানো হয়।

কারণ, আমার অফিসে লোকবল সংকট রয়েছে। ব্যস্ততার কারণে চিঠিটির খাম দেয়া হয়নি। খাম না দেয়ায় ওই অফিস সহকারীকে তাৎক্ষণিক হেনস্তা করে। পরে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে ধমকান যে কেন খাম ছাড়া চিঠি দিলাম।

তাঁদের কথাপোকথনের একটি কলরেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে আসে। কলরেকর্ডটিতে খাম ছাড়া চিঠি দেয়ায় জামায়াতকর্মীকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শোনা যায়। ওই জামায়াত কর্মী জানতে চান, কেন খাম ছাড়া চিঠি দেয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে বলেন, ‘কোথায় কি জিনিস পাঠাইতে হয়, কেমনে চিঠিপত্র পাঠাতে হয় বুঝতে পারেন না? রাজনৈতিক নেতাকে চিঠি দিতে হলে খামে ভরে দিতে হয়। খামের টাকা নাই? বরাদ্দের টাকা কোথায় যায়?

তিনি আরও বলেন, ‘টাকা, বিল-ভাউচার ভাল করে খাইয়েন, এতদিন যা খাইছেন এখন বুইজ্যা-শুইন্যা খাইয়েন। তখন মহিলা কর্মকর্তা বলেন, আপনি এসব কি বলছেন। এর উত্তরে জামায়াত কর্মী বলেন, যা বলছি ভাল করেই বলছি। ভদ্রলোকের মতো চিঠি পাঠাবেন। আপনি ইউএনওকে কমপ্লিন করেন যে জামান ভাই ফোন দিয়ে এই কথা বলছে।

মহিলা কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্যে করে ওই জামায়াত কর্মীকে আরও বলতে শোনা যায়, আপনি সংশোধন হয়ে যান। আওয়ামী লীগের সময় অনেক খাইছেন। আওয়ামী লীগের ভয় দেখিয়ে অনেক মানুষকে ল্যাংঠা করছেন আপনি। চেয়ারম্যানদের পর্যন্ত ল্যাংঠা করছেন। আপনি এখন থেকে ভাল হয়ে যান।

এ সময় তিনি ওই মহিলা কর্মকর্তাকে সালথা ছাড়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, সম্ভব না হলে সালথা ছাড়েন। তখন এই কর্মকর্তা বলেন ডিপার্টমেন্টের ইচ্ছায় আমি সালথা থাকতেছি। তখন ওই কর্মী বলেন, ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের, ডিপার্টমেন্ট আপনার বাজানের না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই জামায়াত কর্মী বলেন, আমি কোনো দলের না। আমার দোকানে উপজেলা জামায়াতের আমীর ও সেক্রেটারীকে চিঠি দেয়ার জন্য এসেছিল। ওই চিঠিতে কোনো খাম ছিল না। পরে আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম, এটা ধমক হইলো কিভাবে?

কারণ, উনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছেন। তাছাড়া এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগের সময় ক্ষমতা দেখিয়েছে, প্রতিদিন দুপুর ২ টার পর অফিস করতো।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা শাখার আমীর আবুল ফজল মুরাদ বলেন, ‘ঘটনাটি ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন। উনাকে ধমকায়নি, জানতে চেয়েছিল। তারপরও বিষয়টি নিয়ে বসা হবে। তবে চিঠি দেয়ার একটি ন্যূনতম কার্টেসী থাকা উচিৎ ছিল।’

এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিছুর রহমান বালি বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছিনা।’


0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments