শিরোনাম

নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে তৈরিকৃত দাবিনামা বিষয়ক আলোচনা সভা


লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা এবং নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার লক্ষ্যে আজ ২২ ডিসেম্বর,২০২৪ সকাল ৯:৩০ টায়,  গুলশানের লেকশোর হোটেলে UN Women এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং বহ্নিশিখার যৌথ উদ্যোগে “আন্তঃপ্রজন্মভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নারী আন্দোলন শক্তিশালী করি” শীর্ষক  প্রকল্পের চলমান কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে তৈরিকৃত দাবিনামা (Charter of Demand)  সকলের সামনে উপস্থাপনের জন্য আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম । স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী; নিজেরা করির সমন্বয়কারী এবং সিপিডি বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্য খুশি কবির, বিআইজিডির সিনিয়র ফেলো অফ প্র্যাকটিস মাহিন সুলতান, এবং ইউ এন উইমেন বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার তপতী সাহা।

স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন , শতাব্দীকালব্যাপী

 সারা পৃথিবীতে নারী –পুরুষের  সমতা প্রতিষ্ঠার ও নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার যে  আন্দোলন চলছে  বাংলাদেশের নারী অধিকার কর্মীরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে  দীর্ঘদিন  ধরে  সেই আন্দোলনে শামিল আছেন। এই আন্দোলনের ফলে  নারীর ও কন্যার প্রতি প্রতি বৈষম্য দূর করে নারীর ও কন্যার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বেশ কিছু সাফল্য আছে এমনটি বলা যায়। ১৯৯৫ সনে অনুষ্ঠিত বেইজিং চতুর্থ  বিশ্ব নারী সম্মেলনের  মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক নারী আন্দোলন একটা নতুন মাত্রা পায়, যা নারীর অগ্রযাত্রার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে । বেইজিং সম্মেলনের পর নারীর অধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশে দেশে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা গৃহীত হয় । প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নারী আন্দোলন এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই তবে বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মকে নারী আন্দোলনের সাথে  কিভাবে যুক্ত করা যায় তা  নারী আন্দোলনের জন্য ভাবনার বিষয়,  তার পাশাপাশি বর্তমানের  বৈশ্বিক ও জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারী ইস্যূকে রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকেরা কিভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন  তাকে বিবেচনায় রেখে  বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও বহ্নিশিখা সকলকে নিয়ে সকল নারীর সমস্যা গুলো ও  চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে । চিহ্নিত সমস্যা ও  চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে আগামী দিনের নারী আন্দোলনকে আরো কিভাবে বেগবান করা যায়, সেবিষয়ে আলোচনার জন্য আজকের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা  ইউ এন উই মেন এর  সহযোগিতায় চলমান কর্মসূচির আওতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মূল থিম
কেউ যেন বাদ না পড়ে যায়- এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে   নারী আন্দোলনের দাবিনামা তৈরির জন্য বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে বলেন সরকারি নীতি নির্ধারক, সরকারি কর্মকর্তা,  তৃণমূলের নারী নেত্রী, সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, যৌনকর্মী, তরুণ নেতৃবৃন্দ, ভিন্ন লিঙ্গের মানুষ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতামত ও সুপারিশকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তৈরি করা  দাবিনামা টি  সকল নারীদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরার  মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসন করে  নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বহ্নিশিখার পরিচালক সামিনা ইয়াসমিন বলেন, নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে প্রজন্মের সাথে প্রজন্মের একত্র  হয়ে কাজ করা জরুরি।  দাবিনামা তৈরিতে মূল ইস্যূ ছিলো শিক্ষা, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা, প্রজনন স্বাস্থ্য, আইনী সংস্কার, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্নের প্রভাব, জেন্ডার রেসপনসিভ বাজেটিং, সুশাসন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সমূহ তুলে ধরা ।  পাশাপাশি   এই বিষয়গুলোতে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং  দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ উপস্থাপন হয়েছে।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত  ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের মেনে নেয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে।  তিনি আরো বলেন নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় সাম্য কে, সমদর্শিতা কে গুরুত্ব দিতে হবে। সমতা প্রতিষ্ঠায় নারী-পুরুষ উভয়ই অংশীজন । সমাজ, রাষ্ট্রে পরিবারে সমতা প্রতিষ্ঠিত না হলে প্রকৃত সমতা আসবে না। উন্নয়নে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

নিজেরা করির সমন্বয়কারী এবং সিপিডি বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্য খুশি কবির বলেন ভূমি সংস্কার আইনের অধীনে খাস জমির মালিকানা  নারীবান্ধব করতে হবে, ভূমি ইসূ্তে নারীর অভিগম্যতার দিকটি ও নিশ্চিত করতে হবে।  পাশাপাশি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করতে হবে,  গৃহ শ্রমিক বিশেষত: নারী ও শিশুদের সুরক্ষা সহ, শ্রমিকদের জন্য সমান মজুরি নিশ্চিতের উপর গুরুত্বারোপ করেন ।

বিআইজিডির সিনিয়র ফেলো অফ প্র্যাকটিস  ও নারী কমিশনের  সদস্য মাহিন সুলতান বলেন ;

দাবিনামায় তরুণ, বয়স্ক দের দাবি আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে হবে, বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে বাঙ্গালি জাতি সত্ত্বা সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্রজাতিসত্ত্বার উপর গুরুত্ব দিতে হবে, নারীর জন্য  ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ কৌশলগত ভাবে উপস্থাপন, আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের উপর জোর দিতে হবে।

ইউ এন উইমেন বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার তপতী সাহা বলেন, সারা বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের প্রেক্ষিত থেকে উপস্থাপিত আজকের দাবিনামাটি  দুইটি সংগঠনের মাধ্যমে সকলের হাতে আছে কিন্তু এই দাবিনামা তৈরিতে সকলের অবদান আছে।  ইউএন উইমেন মনে করে নারী আন্দোলন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। বাংলাদেশের নারী আন্দোলন এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন নারীর অবস্থান পরিবর্তনে কৌশলগতভাবে   প্রয়োজনীয় দাবি সমূহ উপস্থাপন জরুরি।   এসডিজির ৫ নং লক্ষ্যমাত্রা বিশ্বের কোথাও এখনো  অর্জিত হয়নি, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আমাদের কাজের গতিশীলতা বাড়াতে হবে, নারীর অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়ে বেইজিং+৩০ কে সামনে রেখে  অ্যাভোকেসির কৌশলগত টুল হিসেবে  এই দাবিসমূহ উপস্থাপন করতে হবে।    

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন,আজকের দাবিনামা উপস্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে বলে মনে করি। জেন্ডার জাস্টিস প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে দেশে সারা পৃথিবীতে

 নারী আন্দোলন অবিরাম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, আমরা সম্মিলিতভাবে অগ্রসর হতে চাই। লিঙ্গ সমতা ও জেন্ডার সাম্যতার জন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজে ক্ষমতার অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে পুননির্মাণের জন্য নারীর সম্পত্তির অধিকার, গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়ন, কেয়ার সার্ভিসের মূল্যায়ন, নিরাপদ- সহজবোধ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, বিয়ে ও বিয়ে বিচ্ছেদের সম অধিকার দিতে হবে। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মপরিকল্পনা, তৈরির ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে নারী আন্দোলন ও রাষ্ট্রকে সক্রিয় থাকতে হবে।  দায়বদ্ধতার জন্য শিক্ষার সুযোগ, মানবিকতার আলোকে , লিঙ্গীয়  সমতা প্রতিষ্ঠায়  এই  দাবিনামা বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।  

মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এর ফাল্গুনী ত্রিপুরা, নারীপক্ষের গীতা দাস, শক্তি ফাউন্ডেশন এর প্রতিনিধি নিলুফা বেগম, বাদাবন সংঘের লিপি রহমান, অগ্নি ফাউন্ডেশনের জারিন চৌধুরী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সদস্য কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক নোভা আহমেদ,  সর্ম্পূণার সভাপতি জয়া শিকদার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিবেশ সম্পাদক পারভীন ইসলাম, জাতীয় নারী শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক শাহিদা পারভীন শিখা, সাংগাত এর ফওজিয়া খন্দকার ইভা,  ডিএমপি এর উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের এসি নাসরিন, প্রমুখ, ।

উক্ত আলোচনা সভায়, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের  সদস্য হালিমা হানুম, ইউএন উইমেন এর, কনসালট্যান্ট এলিনা হেডম্যান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ  ও কর্মকর্তা,বহ্নিশিখার কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্রিটিশ হাই কমিশন,- এর সোশাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজর, প্রাগ্রস্বর,  এ এল আরডি, অগ্নি ফাউন্ডশন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, সোশ্য্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিষ্ট, বিএনএসকে, ইউএসআইডি, ব্যঞ্জনা ফাউন্ডেশন এর প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট  অথরিটি,বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সাংবাদিকসহ সহ প্রায় শতাধিক জন উপস্থিত ছিলেন।


0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments