শিরোনাম

‘‘রোকেয়া দিবস-২০২৪’’ উপলক্ষ্যে  সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান 


আজ ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে(টিএসসির বিপরীত পাশে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)বিকাল ৩:০০ টায় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০২৪ এর কর্মসূচির অংশহিসেবে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ‘‘রোকেয়া দিবস’’ উপলক্ষ্যে  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। আলোচক হিসেবে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী শীপা হাফিজা,বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী,কর্মজীবী নারী এর হাসিনা আখতার,স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট এর চন্দন লাহিড়ী,ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএ অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন এবং এডাবের সমাপিকা হালদার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রোকেয়া সাখাওয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে  তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পন করেন সামাজিক প্রতিরোধকমিটির সদস্যবৃন্দ।এরপর সঙ্গীত পরিবেশ করেন সংগীতশিল্পী ছায়া কর্মকার।

আলোচনায় উপস্থিত বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী শীপা হাফিজা বলেন,রোকেয়া এমন এক সমাজের স্বপ্ন্ দেখেছিলেন যে সমাজে অজ্ঞতা থাকবেনা, বৈষম্য ও নিপীড়ন থাকবেনা।তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকল শ্রেণীর  নারী-পুরুষকে উভয়কে কাজ করতে হবে। আজকের শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষের প্রতি হওয়া  অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শেখায় না,এমন শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন রোকেয়া শুধু নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে নয় বরং নারী আন্দোলনের পাশাপাশি বিশ^ব্যাপী নারীর অগ্রযাত্রা কে গুরুত্ব দিয়েছেন তার বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে। শুধু নারী আন্দোলন নয়, সমাজ সংস্কারক হিসেবে দেশের অগ্রগতির লক্ষে নারী-পুরুষকে মানসিক দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।নারীর অগ্রযাত্রার পথে বাধা চিহ্নিত করার পাশাপাশি পথও দেখিয়েছেন তিনি।

স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট এর চন্দন লাহিড়ী বলেন,অনেক দীর্ঘ সংগ্রামের পর  আজ যখন রংপুরে প্রতিষ্ঠিত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের কথা আসে তা অত্যন্ত দু:খের।১৪০ বছর আগে রোকেয়া থেকে আয়শা খানম এর সময়কালে নারীমুক্তির লক্ষ্যে যে নারী আন্দোলন শুরু হয়েছিলো তার অর্জন ও অগ্রগতি কতখানি হয়েছে আমাদের তা দেখতে হবে।

কর্মজীবী নারী এর হাসিনা আখতার বলেন,তিনি রোকেয়ার উদ্বৃতির উল্লেখ করে বলেন নারীর স্বার্থ ও পুরুষের স্বার্থ ভিন্ন নয়,আমরা সবাই মানুষ।নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে।দেশের প্রতিটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীদের অবদান রয়েছে,নারীর অবদান কে স্বীকৃতি দিতে হবে।নারীর প্রতি সহিংসতা মুক্ত সমাজ গড়তে হবে।তার জন্য রাত-দিন নিরাপদ হতে হবে।

ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএ অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার বলেন আমরা এগিয়েছি বটে,কিন্তু মুক্তি এখনো আসেনি।আমরা এখনো অবরোধবাসিনী,এখনো বিভিন্ন কুসংস্কার ও অবরোধের বেড়াজালে নারীরা আটকে আছে। অনেক বাধা আসবে,সেই বাধাকে মোকাবেলা করে নারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন,সাম্প্রতিক সময়ে রোকেয়ার প্রতি অবমাননার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় পুরুষতন্ত্র শুধু পুরুষরা নয় ক্ষেত্রবিশেষে নারীরা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা লালন করে থাকেন।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা.ফওজিয়া মোসলেম বলেন,রোকেয়া যে নারী-পুরুষের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেনতার উত্তরসূরী হিসেবে সেই আন্দোলনেকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। ১৪৫ বছর  আগে নারী মানুষ হওয়ার জন্য আন্দোলন করত,এখন নারীকে মর্যাদা পাওয়ার জন্য ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, সকল জায়গার নারীদের সমান সুযোগ দিতে হবে, তাদের সুযোগ তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপগ্রহণ করার ও আহ্বান জানান্ তিনি এসময়,পাশাপাশি রোকেয়ার বিষয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন এডাবের সমাপিকা হালদার। আলোচনা শেষে নৃত্য পরিবেশনা  করেন  মুক্তা  ঠাকুর, মনুসংহিতা এবং সেতু ও তার দল।

উক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং কর্মকর্তারা সহ  প্রায় ১৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী।


0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments